উচ্ছেদের চাপ ঠেকিয়ে বস্তি আগলাচ্ছেন বাবলি, মাসুদুররা
সংযোগ প্রতিবেদনঃ বাড়ি ভেঙে দেওয়ার হুমকি আসে নিয়মিত। হুমকি আসে উচ্ছেদ করারও।
ঘর বাঁচাতে একজন লড়ছেন নিজে, শামিল করছেন প্রতিবেশীদের।
আরেকজন দেখছেন জমির লোভে গরিব মানুযের ভিটেয় লাগানো হয়েছে আগুন। জোট ভাঙতে ছড়ানো হয়েছে বিভাজনের বিষ। তিনিও এককাট্টা করছেন বাসিন্দাদের।
একজন শিলিগুড়ির বাবলি খাতুন, আরেকজন দক্ষিণ চব্বিশ পরগনায় মহেশতলার ১৬ বিঘা বস্তির মাসুদুর রহমান লস্কর। 'পশ্চিমবঙ্গ বস্তি উন্নয়ন সমিতি'র সংগঠক দু'জনেই। লড়ছেন বস্তি উচ্ছেদের বিরুদ্ধে। প্রবল শক্তিশালী প্রতিপক্ষের সঙ্গে যুঝতে হচ্ছে প্রতিদিন। দু'জনেরই অভিযোগের কেন্দ্রে রাজ্যের সরকারে আসীন তৃণমূল কংগ্রেস। ১৬ বিঘায় শিশুদের স্কুলে ভর্তি আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে।
বাবলি খাতুন বলছেন, "আমরা রেলের জমিতে থাকি। আগে উঠিয়ে দেওয়ার ভয় ছিল না। এখন আসছে।" তাঁর কথায়, "ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার ব্যবস্থা ছিল বস্তিতে। এখন তো কোনও সরকার নেই। খেটে খেতে হয় যাদের, তাদের তো রোজগার নেই। উলটে জিনিসের যা দাম, তেল কিনতে হয় দু'শো টাকায়, চাল ডালেরও সেই অবস্থা।"
বাবলি খাতুনের ক্ষোভ, আগে গরিবদের ভাতা দেওয়া হতো। বন্ধ হয়ে রিয়েছে। দশ কেজি চাল দিত, বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তিনি বলছেন, "আমরা ডেপুটেশন দিতে যাই কর্পোরেশনে। পুলিশ আটকে দেয়। প্রতিবাদ করি। এগারোজনকে গ্রেপ্তার করে। তাঁরা জেলে বন্দি ছিলেন।"
মহেশতলার ১৬ বিঘা বস্তিতেও তৃণমূল-প্রশাসন-প্রোমোটার চক্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ। মাসুদুর রহমান লস্কর বলছেন, "২০১২'তে তৃণমূলের মদতে আগুন লাগানো হয় বস্তিতে। আসলে উচ্ছেদের মতলব। সংগঠিত হতে থাকলেন বস্তিবাসীরা। একটা অংশকে ভেঙে দেওয়ার জন্য বলল আবাসন দেওয়া হবে। সার্ভে করে দেখলাম প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হবে না। বস্তিবাসীদের সে কথা জানালাম। ফের আন্দোলন গড়লাম পুনর্বাসনের দাবিতে।"
মাসুদুর অভিজ্ঞতা জানিয়ে বলছেন, "সেই আন্দোলন ভাঙতে পাঠানো হলো গ্রন্থাগার মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীকে। মুসলিম হিন্দু ধরে বিভাজনের চেষ্টা হলো। আমরা ঠেকালাম। আসলে তিনিও উচ্ছেদের পক্ষে, ধরা পড়ে গেলেন। সে সময়ে যিনি পৌরপ্রধান, এখন বিধায়ক, তাঁর সঙ্গে বস্তি উচ্ছেদের কাজ চালাচ্ছিলেন।"
মাসুদুর জানাচ্ছেন, পুরুষরা তখন পুলিশি হেনস্তার মুখে। মহিলারা সামনে এগিয়ে আসেন। টুলু বেওয়া হন আন্দোলনের মুখ। বস্তিতে আগুন লাগাতে এলে অতন্দ্র প্রহরী হলেন তাঁরাই।
হাইকোর্টে বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের সহায়তায় মামলা দায়ের হয়। আপাতত উচ্ছেদ ঠেকিয়ে রাখা গিয়েছে।
মাসুদুর বলছেন, "আমরা আইনি লড়াইয়ে আছি, আবার রাস্তার লড়াইয়েও আছি। বাচ্চাদের ভর্তি নিচ্ছিল না স্কুলে। আমরা বস্তিবাসীদের সঙ্গে নিয়ে স্কুলে স্কুলে যাই। এসআই'র সঙ্গে দেখা করি। এখন শিশুরা পড়ছে।
মহামারীর সময় সরকার কোনও সাহায্য করেনি। আমরাই চিকিৎসক এনে বিনে পয়সায় চিকিৎসা করাই।
বিজেপি এখন বিপদ, জানাচ্ছেন দুজনেই। তাঁরা বলছেন, "ওরা ধর্ম জাতের নামে মানুষকে ভাগ করতে চায়।" শিলিগুড়িতে ২৬ আগস্ট সংগঠনের মিছিল ছিল। বাবলি জানাচ্ছেন, "লোক কোথা থেকে হবে তা নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। দেখলাম বহু মানুষ এসেছেন, আমরা ভাবতেও পারিনি। হ্যাঁ, অনেকে সরে গিয়েছিলেন। আবার ধীরে ধীরে আসছেন।"